![]() |
| নীহাররঞ্জন রায় |
বাংলার নয়, লিখেছেন বাঙালির ইতিহাস। ইতিহাস সম্পর্কে যাদের মোটামুটি আগ্রহ রয়েছে এমন সব মানুষই চিনেন এই বাঙালীকে। বহুবিষয়ে পন্ডিত এই ব্যক্তি যে গ্রন্থ রচনা করেছেন তা আদি বাঙালিদের সম্পর্কে সব থেকে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বাঙালির নাম নীহাররঞ্জন রায়।
নীহাররঞ্জন রায় ১৯০৩ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন স্থানীয় ন্যাশনাল স্কুলে, যেখানে তাঁর পিতা শিক্ষকতা করতেন।
সিলেটের মুরারীচাঁদ
কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ স্নাতক (১৯২৪) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে ১৯২৬ সালে এম.এ পাস করেন।
ঐ বছরই তিনি তাঁর Political History of Northern India, AD 600-900’ নিবন্ধের জন্য ‘মৃণালিনী স্বর্ণপদক’ পান। ১৯২৭ থেকে ১৯৩৩ সালে কিছুকাল তিনি তাঁর শিক্ষক অধ্যাপক বেণীমাধব বড়ুয়ার সঙ্গে বার্মায় কাটান এবং একত্রে বার্মিজ মন্দির স্থাপত্যের উপর ব্যাপক গবেষণা চালান। এ গবেষণার ফলে কারুশিল্পের প্রতি তাঁর আকর্ষণ গভীর হয় এবং তিনি উপলব্ধি করেন যে সমাজ, রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির বৃহত্তর পরিমন্ডল থেকে বিচ্ছিন্নভাবে শিল্পকলা সম্পর্কে অধ্যয়ন করা যায় না।
তিনি ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতে সমান পারদর্শী ছিলেন এবং লিখেছেন বিচিত্র উপাদান নিয়ে। ইংরেজিতে লেখা সত্তরটির বেশি ও বাংলায় লেখা ছত্রিশটি প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ভাষণ এবং ইংরেজিতে পনেরটি ও বাংলায় সাতটি গ্রন্থের বিষয়বস্তু ছিল ইতিহাস, চারুকলা, স্থাপত্য, নৃবিদ্যা, লিপিতত্ত্ব, ধর্ম, সাহিত্য, সমসাময়িক রাজনীতি এবং গান্ধী, নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসুর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম।
তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা বাঙ্গালীর ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকে মুসলিম শাসনের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের বাঙালির ইতিহাসের একটি সুবিশাল গ্রন্থ। এটি প্রকৃত অর্থেই বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস বোঝার জন্য একাধারে পথনির্দেশক ও ভিত্তিস্তম্ভ।
তার এই গ্রন্থ বিদ্যান সমজে ব্যাপক সমাদৃত। প্রবোধচন্দ্র সেন এই বই সম্পর্কে বলেন,
এটি বাংলার প্রাচীন ইতিবৃত্তবিষয়ক শেষ বই এবং বাঙালির ইতিবৃত্ত সাধনার চরম পরিণতিও ঘটেছে এটিতেই। বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য, আলোচনার বিস্তারে এবং দৃষ্টির গভীরতায় আর কোন বই এর সঙ্গে তুলনীয় নয়।
যদুনাথ সরকার বলেন,
… ভাষা ও সাহিত্যের দিক হইতেও সমগ্র বঙ্গভাষা ও সাহিত্যে ইহা একটি অনন্যপূর্ব গ্রন্থ। ইতিহাস-বিষয়েই শুধু নয়, সাহিত্য-রচনার ক্ষেত্রে এত বিশদ, পূর্ণাঙ্গ, এত পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও যথার্থ বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে রচিত গ্রন্থ ইহার আগে কেহই লিখে নাই।
১৯৮১ সালে মৃত্যুর কিছুকাল আগে তিনি বাঙ্গালীর ইতিহাস গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ড লেখার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং তিনি মনে করেন যে, এটাই হবে তাঁর ‘সামান্য’ বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের ‘সর্বাধিক আনন্দময় পরিণতি’। কিন্তু তা আর পূর্ণ হয়নি। এর কয়েক মাস পরেই তিনি পরলোকগমন করেন।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন